অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক : দেশের মাটি ও মানুষের দল আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেনাশাসনের উচ্ছিষ্টভোগী রাজনৈতিক দল বিএনপি’রই বরং পায়ের তলায় মাটি নেই। কারণ এ দল মাটি থেকে গড়ে ওঠে নাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএফইউজে এবং ডিইউজে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এ দল সৃষ্টি হয়েছে ক্ষমতার উচ্চ শিখরে বসে। কাজেই ক্ষমতার উচ্চশিখরে বসে যে দল তৈরি হয় তারই পায়ের নিচে মাটি থাকে না বা শিকড় থাকে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় সাংবাদিকরা সত্যিই এক বিভীষিকাময় অবস্থা পার করেছে। শত শত সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য সাংবাদিক হত্যাকা-ের শিকার হলেও ওই সময় একটি সাংবাদিক হত্যারও বিচার করা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হারুন-অর-রশিদ, সরদার শুকুর হোসেন, হুমায়ুন কবির বালু, মানিক চন্দ্র সাহা, শেখ বেলাল উদ্দিন, কামাল হোসেন, দীপঙ্কর চক্রবর্তী, শহীদ আনোয়ার, সৈয়দ ফারুক আহমেদ, গোলাম মাহফুজ ও নাবিল আব্দুল লতিফসহ ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। জোট সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০টি মামলা দায়ের এবং ৮০০ বারেরও বেশি হুমকি-হামলার ঘটনা ঘটে। বিভীষিকাময় নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক সংবাদকর্মী জীবন বাঁচাতে নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন।জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, প্রেস কাউন্সিল, প্রেস ইনস্টিটিউট, রেডিও, টেলিভিশন সর্বত্র দলীয়করণ করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে সকল হত্যাকা-ের যেমন বিচার হচ্ছে, তেমনি সকল সাংবাদিক হত্যারও বিচার হবে। আর মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এবং হত্যার হুকুমের আসামিদের বিচার করা হবে।
ইফতারের আগে দেশ, জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামলা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
নতুন ওয়েজবোর্ডের কথা বলা হয়েছে। আমরা কিন্তু নতুন ওয়েজবোর্ড করে দিয়েছি। যেখানে আটকে আছে সেখানে কিন্তু আমাদের দোষ নয়, সরকারের দোষ না। আটকে আছে মালিকদের কারণে (সংবাদপত্র শিল্প মালিক)। এখানে মালিকদের যে প্রতিনিধি দেয়া দরকার সেখানে কিন্তু এখনও মালিকদের প্রতিনিধি দেয়া হয় নাই। এখানে সংবাদপত্রের অনেক মালিকরাও উপস্থিত আছেন, কাজেই আমি আহ্বান জানাবো মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দিলেই ওয়েজবোর্ড কার্যকরভাবে কাজ শুরু করতে পারে। কাজেই সেটা আশাকরি আপনারা করবেন।
তিনি বলেন, আমরা দেশে সর্বপ্রথম জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাসহ তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০০৯ সাল থেকে গণমাধ্যমের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। ৬২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। আরো কার্যক্রম চলমান আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৪ প্রণয়নসহ ১৮টি আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন ও সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের গত ৮ বছরে ৭ শতাধিক পত্রিকার নতুন করে নিবন্ধন প্রদান এবং বেসরকারিখাতে ৪৬টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যা মোকাবিলায় ৫ ভাগ কোটা বরাদ্দ দিয়ে প্লট প্রদান করা হয়েছে। ’৭৪ এ বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের জন্য যে আইন তৈরি করেছিলেন তা পুনর্বহালের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গি এবং মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
দোয়া ও ইফতার মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (বিএফইউজে) মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এবং মহাসচিব ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শাবান মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বক্তৃতা করেন।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই